পবিত্র মক্কা মদিনার দিনগুলি : (পর্ব ২)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:০০:৩০ রাত
.....পরে জানলাম এত দ্রুত কিভাবে পৌঁছলাম আসলে আমার ধারনা ছিল জেদ্দা থেকে মক্কার দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার, পরে জানতে পারি ২৮০ কিলোমিটার নয় ১২০ কিলোমিটার. যাই হোক আমাদের হ্যান্ড ব্যান্ড আই ডি কার্ড দেয়ার পর গাড়ী আবার ছেড়ে দিল গাড়ী চলার সময় রাস্তার দুই পাশে খেয়াল করলাম হাজার হাজার মানুষ আমরা যে পথে চলছি সে পথেই হেটে চলেছে জোহরের নামাজের সময় হয়ে এসেছে বুঝলাম এই মুসল্লীরা সবাই মসজিদুল হারামে নামাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে প্রায় ১০মিনিট পর গাড়ী থামল সবাইকে নামতে বলা হলো রাস্তা ঘাট ও গম্ভীর আবহে বুঝা যাচ্ছে যে পবিত্র মসজিদুল হারামের দূরত্ব এখান থেকে খুবই নিকটে আমার অনুমানই সত্যি হলো হোটেলে উঠার আগে মসজিদুল হারামের একটি নবনির্মিত গেট নজরে আসল. যে স্হানে আমাদের হোটেল সে স্হানের নাম ঝারোয়াল অথবা জবল ই কাবা নামে পরিচিত এখান থেকে মসজিদুল হারামের দূরত্ব ৩০০ মিটারের কাছাকাছি আমি মাকে মায়ের কামরায় রেখে আমার কামরায় আসলাম সকলে জামাত সহকারে জোহরের নামাজ আদায় করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাতে ওমরার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম. আমার রুমে আমার সমবয়সী তিনজন হাজী পেলাম ফটিকছড়ির ইসমাইল রাউজানের ইমতিয়াজ ও বালুছড়ার ফরিদ কাকতলীয় হলেও আমার মা যে রুমে আছেন তাদের তিন জনের মাও একই রুমে থাকবেন আসর নামাজ শেষে আমি ও ইসমাইল বয়োবৃদ্ধ হাজী শামসুল হককে নিয়ে চুপিসারে মসজিদুল হারামে চলে যাই কারন রাত পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার মানসিকতা ছিলনা ...
বাব আল ওমরা
আমরা তিন জন বাব আল ওমরা দিয়ে পবিত্র মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে সোজা মাতাফে চলে যাই এবং পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফ সামনে দেখতে পেয়ে সবার চোখে পানি চলে আসে. আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমি পবিত্র কাবার সামনে দাড়িয়ে আছি সে এক অনন্য মুহুর্ত. ঐ সময় মাতাফে খুব ভিড় ছিল সম্ভবত কোন রাস্ট্রীয় অতিথি ওমরা পালন করছিলেন আমরা মাতাফে মাগরিবের নামাজ আদায় করে হোটেলে ফিরে আসি. এশার নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়ার পর সকল হাজী সাহেবান দের বিশ্রাম চলে যেতে বলা হয় এবং রাত দুইটায় সকল হাজী সাহেবান দের ওমরার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়. এহরাম পরিধান অবস্হায় হোটেল কক্ষে শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসেনা সবারই একই অবস্হা. অবশেষে রাত দুইটায় আমাদের লোকাল মোয়াল্লেম মোহাম্মদ আলী ও হাফেজ রুহুল আমিনের তত্ত্বাবধায়নে আমরা পবিত্র ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম. আমরা বাব আবদুল আজিজ দিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় নামাজ আদায় করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন শেষে তাওয়াফ শুরু করি নির্দেশনা ছিল যেন কোন ভাবেই দলছুট না হই এতে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু কার কথা কে শুনে তাওয়াফ শুরুর সাথে সাথেই প্রচন্ড ভিড়ের কারনে আমি ও আমার মা মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই তবে দিশাহারা না হয়ে তাওয়াফ অব্যহত রাখি. এখানে একটা বিষয় না বললেই নয় আমরা যখন তাওয়াফ করছিলাম হঠাৎ উর্ধ্বাকাশে দৃষ্টি চলে যায় আমরা অবাক না হয়ে পারিনি এভাবে স্বচক্ষে আল্লাহর কুদরত দেখতে পাব তা কল্পনায় ছিলনা. কি দেখেছিলাম ? দেখি আমাদের তাওয়াফের সাথে সাথে এক ঝাক পাখি ঠিক মানুষের মতই পবিত্র কাবা ঘর অনবরত চক্কর (তাওয়াফ) দিচ্ছে দৃশ্যটি এতই অভূতপূর্ব ছিলযে বর্ণনা কিংবা এর ব্যখ্যা দেয়া আমার মত নালায়েকের পক্ষে কঠিন. (পাখিগুলি আবাবিল কিংবা কবুতর ছিলনা) পরে স্হানীয়দের কাছে জেনেছি খুব কম সৌভাগ্য বান এমন দৃশ্যের সাক্ষাত পায়. অতপর সাত দফা তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমে নামাজ আদায় করে আবে জমজম পান করে পবিত্র সাফা মারওয়া উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি. মায়ের মুখ দেখে বুঝতে পারছি খুব কষ্ট হচ্ছ ওনাকে একটু বিশ্রাম নিতে বললেও তা না করে পবিত্র সাফা মারওয়া সাই সম্পন্ন করি.
পবিত্র ওমরা পালনকালে আমার সহযাত্রী ইসমাইল ও জনৈক হাজী
অতঃপর আমার মস্তক মুন্ডন ও মায়ের চুলের আগা কেটে সফল ভাবে ওমরা সম্পন্ন করে হোটেল কক্ষে এসে গোসল শেষে এহরাম মুক্ত হই. ফজর নামাজ পড়ে নাশতা করে ঘুমিয়ে পড়ি.
পবিত্র সাফা মারওয়ায়
কমবেশি সকল হাজী দের জ্বর উঠছিল আমার মা আমি কেউ বাদ যাইনি তবে সেরে উঠতে মোটেই সময় লাগেনি একদিনের মধ্যেই সবাই সুস্হ হয়ে যাই. হজ্বের আগে ও হজ্বের ৫ দিন পর পর্যন্ত অত্যাধিক ভিড় এড়াতে মোবাইল এস এম এসের মাধ্যমে অতি জরুরী না হলে মসজিদুল হারামে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়. বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৮ তারিখ আছর নামাজ শেষে মাকে হোটেল কক্ষে রেখে আমি ও ইসমাইল মসজিদুল হারামে যাই. বাব আল ফাহদ ওবাব আল ওমরার মধ্যবর্তী বহিরাংশে আমরা সালাতে মাগরিবের জন্য কাতারে দাড়াই. আজানের পর নামাজ শুরু হলো ইমাম সাহেব কেরাত পড়া শুরু করার সাথেই দ্ই চোখ বেয়ে অনর্গল অশ্রু নির্গত হতে থাকল আমার জীবনে আমি এত সুললিত কন্ঠে কেরাত শুনি নাই ইমাম সাহেব পড়ছেন "ওয়াত তীন ওয়া যাইতুন" আর আমার মনে হচ্ছে জান্নাতে বসে আমি এই তেলওয়াত শুনছি মসজিদুল হারামের ভিতরে ও বাইরে শক্তিশালী সাউন্ড সিস্টেমর কারনে এই তেলওয়াত আরো গম্ভীর পরিবেশ তৈরি করে সত্যি বলতে বাধা নাই ঐ সময় আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিলাম এখন যদি এই অবস্হায় আমার মৃত্যু হতো নিজেকে দুনিয়ার সবচাইতে সৌভাগ্যবান মনে করতাম. (পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম শ্রদ্ধেয় ইমামের নাম শায়খ মেহের আল মুয়াইকলি)
মসজিদুল হারামের শ্এরদ্রধাভাজন ইমাম মেহের আল মুয়াইকলি
মাগরিবের নামাজ শেষে জানাজার নামাজ পড়ি.. পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদ আল নববীতে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সেটা হতে পারে এক বা একাধিক মাইয়াতের সমষ্টিক জানাজা. নামাজ শেষে খালাত ভাই কুতুবকে ফোন করি কিছুক্ষণ পর সে এসে আমাদের তার দোকানে নিয়ে যায় মক্কা ক্লক টাওয়ারের নীচতলায় তার দোকান "আল হিকমা" মক্কা ক্লক টাওয়ারের আসল নাম "আবরাজ আল বাইত" অনেকে জমজম টাওয়ার নামেও চিনে তবে মক্কা ক্লক টাওয়ার নামেই বেশি পরিচিত
মক্কা ক্লক টাওয়ার (বেইত আল আবরাজ)
১২০ তলা বিশিষ্ট এই স্হাপনাটি মসজিদুল হারামের প্রধান প্রবেশ পথ থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে. এই ভবনটির উচ্চতা ৬০১ মিটার. এই ভবনের সর্বোচ্চ তলায় রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি এই ঘড়ির মূল ডায়াল ১১ তলা ভবনের সমান মক্কা শহরের ৭০ কিলোমিটার দূর হতে এটি দৃশ্যমান হয়. এই ভবনের নীচ তলা হতে পঞ্চম তলায় আছে প্রায় ৬০০০ দোকান আর প্রায় ২৫০'র অধিক দোকানের মালিক চট্টগ্রামের বাসিন্দারা. ষষ্ঠ তলা হতে উপরের বাকী তলাগুলি হোটেল হিসাবে ব্যবহার হয়....
আবরাজ আল বেইত এর রাতের দৃশ্য
বিষয়: বিবিধ
১৯০৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন